ম্যালেরিয়ার লক্ষণ জানেন?
ম্যালেরিয়া অপরিচিত কোনো রোগ নয়। ম্যালেরিয়া নিরাময়যোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য। তবে ক্ষেত্রবিশেষে জীবনঘাতী। বিশ্বে গত কয়েক বছরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অভাবনীয় সাফল্য দেখা গেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব হয়েছে নাটকীয়ভাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সারা পৃথিবীতে কমে গেছে ২১ শতাংশ। ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুহার কমেছে ২৯ শতাংশ। পাঁচ বছরের নিচের শিশুর ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুর হার কমেছে ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ভালো ফল পাওয়া যায়।
তবে তারপরও ম্যালেরিয়া এখন পর্যন্ত জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবেই রয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে সারা পৃথিবীতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে দুই কোটি ১২ লাখ লোক। এর মধ্যে মারা গেছে চার লাখ ২৯ হাজার।
ম্যালেরিয়া জানুন
আমরা সবাই জানি যে ম্যালেরিয়া ছড়ায় এনোফিলিস মশার মাধ্যমে। প্লাজমোডিয়াম নামে বিশেষ এক ধরনের প্যারাসাইট ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী। পৃথিবীতে প্রায় একশ প্রজাতির প্লাজমোডিয়াম আছে। এর ভেতর পাঁচ ধরনের প্লাজমোডিয়াম মানবদেহে ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী।
লক্ষণ
ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণ জ্বর। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এ সময় প্রচণ্ড শীত লাগে। মাথাব্যথা, বমিও হয়। বিশেষ এক ধরনের জীবাণু আছে, যার নাম প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারাম। এটা খুবই ভয়ংকর। এর কারণে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার ভেতর চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে এ জাতীয় ম্যালেরিয়া জটিল আকার ধারণ করে। রক্তের লোহিত কণিকা দ্রুত ভাঙতে থাকে। এতে রক্তশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, মাল্টিঅরগ্যান ফেইলিউর হয়। রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পরীক্ষা
রক্ত পরীক্ষা করে সহজেই ম্যালেরিয়া রোগ ধরা যায়। শুরুতে রোগ ধরতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়, মৃত্যুর ঝুঁকিও কমানো যায়।
চিকিৎসা
মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা করা সম্ভব। খারাপ ধরনের ম্যালেরিয়ায় ইনজেকশনের প্রয়োজন হতে পারে। ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধগুলো এককালে খুব কাজে দিত। আজকাল রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে। তবে নতুন অনেক ওষুধ বাজারে আসছে। এগুলো নিরাময় ও প্রতিরোধ দুই ক্ষেত্রেই কাজ করছে। তারপরও এই রেজিস্ট্যান্স একটি বিরাট সমস্যা। রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে তাই ম্যালেরিয়ার ওষুধ খাওয়া যাবে না।
প্রতিরোধ
মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ বছরের ক্যাম্পেইনে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ওপর বিশেষভাবে আলো ফেলা হয়েছে। ক্যাম্পেইনের স্লোগান হলো ‘ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, দূর হোক সীমাবদ্ধতা’।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করা যায় তিনটি উপায়ে :
১. মশারি দিয়ে
২. মশানাশক অ্যারোসল স্প্রে করে
৩. ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় আগাম প্রতিরোধমূলক ওষুধ খেয়ে।
বলা হয়, ট্রাভেলাররা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া আরো ১৩টি জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় ভ্রমণের আগে তাই ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধমূলক ওষুধ খেয়ে নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য আশাব্যঞ্জক। গত ছয় বছরে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেছে ৫৪ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সব স্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
লেখক :