Close

October 15, 2017

ব্লাড ক্যান্সার কি?

রোগটি আসলে লিউকেমিয়া। ব্লাড ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার নামেই বেশি পরিচিত।

এটি কোনো বংশগত বা ছোঁয়াচে রোগ নয়। ঠিক কী কারণে রোগটি হয়, তা এখনো বিজ্ঞানীদের স্পষ্ট জানা নেই। তবে রেডিয়েশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল বা কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক, পেস্টিসাইড বা কীটনাশক, ভেজাল খাবার ও খাদ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার, হেয়ার ডাই ও কিছু প্রসাধনীর ব্যবহার, লুব্রিকেন্টস, বার্নিশ, কেমোথেরাপি ব্যবহারের ইতিহাস ও কিছু জেনেটিক অসুখ থাকলে ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ওপরের যেকোনো কারণে অস্থিমজ্জার ভেতরের স্টিমসেল বা রক্তের অপরিপক্ব সেলের মিউটেশন বা অন্য কোনো পরিবর্তন হলে ক্যান্সার সেল বা ব্লাস্ট তৈরি হয়, যা অস্থিমজ্জার ভেতরে অতিদ্রুত বৃদ্ধি হয়।

উপসর্গ

দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, বুক ধড়ফড়, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন ইনফেকশন বা জ্বর, গায়ে কালো কালো দাগ ও রক্তক্ষরণ, গায়ে ব্যথা, গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, প্লীহা ও লিভার বড় হওয়া ইত্যাদি ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়ার সাধারণ লক্ষণ।

ক্যান্সার সেল বা ব্লাস্টের সংখ্যা এ সময় এত বেশি বেড়ে যায় যে অস্থিমজ্জার ভেতরে স্বাভাবিক সেল যেমন—লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অণুচক্রিকা তৈরি এবং তা পরিপক্ব হওয়ার মতো যথেষ্ট জায়গা পায় না। ফলে ক্যান্সার সেল ছাড়া অন্য সুস্থ সেলগুলো পরিমাণমতো তৈরিই হতে পারে না।

অস্থিমজ্জার ভেতরে লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, পরিপক্ব শ্বেত রক্তকণিকার ঘাটতিতে ইনফেকশন বা জ্বর ও অস্বাভাবিক অণুচক্রিকার কারণে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে থাকে। একসময় অস্থিমজ্জার ভেতরে ক্যান্সার সেল বা ব্লাস্ট অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা অস্থিমজ্জার ধারণক্ষমতার বাইরে।

ফলে হাড়ের ভেতর প্রচণ্ড চাপ শুরু হয় এবং এতে ব্যথা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্সার সেল বা ব্লাস্ট অস্থিমজ্জা থেকে বের হয়ে রক্তনালির ভেতরে চলে আসে।

সব লিউকেমিয়া এক নয়

ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া মূলত দুই ধরনের। অ্যাকিউট লিউকেমিয়া ও ক্রনিক লিউকেমিয়া।

অ্যাকিউট লিউকেমিয়া খুবই মারাত্মক হয়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে রোগী বেশি দিন বাঁচতে পারে না।

অ্যাকিউট লিউকেমিয়া আবার দুই ধরনের, অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএলএল এবং  অ্যাকিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএমএল।

ক্রনিক লিউকেমিয়া সাধারণত মারাত্মক হয় না। যথাসময়ে চিকিৎসা নিলে রোগী অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ হতে পারে।

চিকিৎসা

কী ধরনের কেমোথেরাপি দিতে হবে তা নির্ভর করে রোগটির ধরনের ওপর, বিশেষ করে অ্যাকিউট লিউকেমিয়া হলে তা রোগটির কোন উপগোত্রের সেটি নির্ণয় করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়। অ্যাকিউট লিউকেমিয়াকে পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন উপভাগে ভাগ করা যায়।

যে প্রকারেরই অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএলএল হোক না কেন, চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। শুধু কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করলে দুই থেকে আড়াই বছর চিকিৎসা নিতে হয়। কারো কারো বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হয়।

আবার অ্যাকিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া বা এএমএল হলে তার চিকিৎসা আরো কিছু বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। এটি মূলত আট প্রকারের, এগুলো এম-০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭- এভাবে পরিচিত।

এম-২, ৪ হলে শুধু কেমোথেরাপি দিয়ে টানা চার মাস চিকিৎসা করলে রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। এম-৩ বা এপিএল ব্লাড ক্যান্সারকে শুধু কেমোথেরাপি দিয়ে টানা দুই বছর চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশের বেশি। এম-২, ৩ ও ৪ ছাড়া বাকি এএমএল ক্যান্সারগুলোর বিএমটি বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ছাড়া কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই।

ক্রনিক লিউকেমিয়ারও প্রকারভেদে চিকিৎসার ধরন ভিন্ন ভিন্ন। ক্রনিক লিউকেমিয়ার রোগী সঠিক চিকিৎসা নিয়ে অনেক দিন ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে।

বর্তমানে মলিকিউলার টার্গেটেড থেরাপি আবিষ্কার হওয়ায় অনেক ব্লাড ক্যান্সার অল্প সময়েই ভালো হয়। ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া তার মধ্যে অন্যতম।

তবে কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসার পর দীর্ঘদিন ফলোআপে থাকা উচিত।

যেকোনো ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি কাজ না করলে বা রোগ আবার হলে এইচএলএ টিস্যু ম্যাচিং ডোনার থেকে স্টিমসেল বা অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হয়।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, ৮ আগস্ট, ২০১৬

ডা. মো. কামরুজ্জামান

 রক্তরোগ ও ব্লাড ক্যান্সার বিভাগ

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

Leave a Reply